সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ
সর্বশেষ সংবাদঃ

স্ত্রীর তালাকের প্রতিশোধ নিতেই শিশু সামিউলকে হত্যা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া:

বগুড়ার শাজাহানপুরের চাঞ্চল্যকর শিশু সামিউল হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যাকারী সামিউলের সৎ পিতা ও মা পরিচয় দানকারী মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্ত্রীর তালাকের প্রতিশোধ নিতেই শিশু সামিউলকে নৃসংশ ভাবে হত্যা করে সৎ পিতা। বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আজ বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার জানান, শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুর গ্রামের মৃত তালেব আলী প্রাং এর মেয়ে সালেহা বেগম (২৮) প্রায় ১০ বছর পূর্বে মাঝিড়া কাগজীপাড়া গ্রামের মৃত মনসুর আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে (৩০) বিয়ে করেন। তাদের সংসারে সামিউল ইসলাম সাব্বির (১০) জন্মগ্রহন করে। সে সাজাপুর পূর্বদক্ষিনপাড়া তালিমুল কুরআন হাফেজি মাদরাসায় পড়ছিল। মাদক সেবনের কারনে সালেহা বেগম প্রায় দেড় মাস পূর্বে জাহাঙ্গীরকে তালাক দেয়। এরপর ছেলে সামিউলকে সাথে নিয়েই খরনা কমলাচাপড় গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ফজলুল হককে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে ছেলেকে মা ও বোনের নিকট রেখে আসার জন্য ফজলু সালেহাকে নির্যাতন করতো। মাঝে মাঝে ঘরের বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিত। খাবার বন্ধ করে অনাহারে রাখতো। ঈদুল ফিতরের দিন সামিউল মায়ের সাথে বেড়াতে যেতে চাইলে ফজলু তাকে মারপিট করে সালেহার বোনের বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয়। ছেলের ওপর স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সালেহা বিয়ের ১০/১৫দিন পর গত ১১ মে-২০২২ তারিখে কাজী অফিসে গিয়ে ফজলুকে তালাক দিয়ে ছেলেকে নিয়ে বোনের বাড়ী চলে যায়। ১৪ মে মাদরাসা খুললে সালেহা ছেলেকে মাদরাসায় রেখে আসে।

এদিকে, স্ত্রী কর্তৃক তালাক প্রাপ্ত হওয়ার পর ফজলু আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে শিশু সামিউলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ মে ফজলু ছেলের মাদরাসায় যায় এবং ছেলেকে তার সাথে যাওয়ার অনুমতি দিতে শিক্ষক মুছাকে অনুরোধ করে। কিন্তু মাদারাসার নিয়ম অনুযায়ী মায়ের অনুমতি ছাড়া কোন ছাত্রকে ছুটি দেয়া হয় না। বিষয়টি ফজলুকে জানানোর পর সে চেলো গ্রামের মৃত খিরদ চন্দ্র দেবনাথের মেয়ে অনিতা রাণীকে (৩৫) শিশু সামিউলের মা সাজিয়ে তার মোবাইল নম্বর মাদরাসার শিক্ষককে দেয় এবং বলে সামিউলের মায়ের সাথে কথা বলেন। অনিতা রানী সামিউলের মা সেজে মাদরাসার শিক্ষককে ফজলুর হাতে ছেলেকে ছেড়ে দিতে বলেন। এরপর ওই শিক্ষক মাদরাসার অন্যান্য ছাত্রদের সামনেই সামিউলকে ফজলুর হাতে তুলে দেন।

এরপর ফজলুল হক অনিতা রানীর সহায়তায় তার গ্রামের বাড়ী কমলাচাপড় সংলগ্ন মানিকদিপা উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত এরফান আলীর ছেলে হাফিজারের মাচা বিশিষ্ট লাউ ক্ষেতের ভেতর শিশু সামিউলকে নিয়ে সুতার রশি দিয়ে গলা পেঁচিয়ে হত্যা করে। লাশ গোপন জন্য মাচার খুঁটির সাথ শিশু সামিউলের লাশ বেঁধে রেখে যায়। ১৭ মে সকালে শিশুর লাশ পড়ে থাকার খবর জানাজানি হলে সালেহা বেগম ও তার স্বজনরা গিয়ে লাশ সনাক্ত করেন।

খবর পেয়ে পুলিশ সুপারসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হত্যার রহস্য উঘাটনে শাজাহানপুর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়। ঘটনার ৬ঘন্টার মধ্যে পুলিশ ঘাতক ফজলুল হক ও অনিতাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে সামিউলের মা সালেহা বাদী হয়ে শাজাহানপুর ফজলুল হক ও অনিতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

 

 

 

 

 

 

 

Check Also

নওগাঁ এডুকেশন ফাউন্ডেশনের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

নওগাঁ প্রতিনিধি: বেসরকারী কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে নওগাঁ এডুকেশন ফাউন্ডেশনের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *