মোঃ মামুন অর-রশীদ, ঠাকুরগাঁও থেকে:
একটিই মাত্র গাছ যেটি ২ বিঘার অধিক জমির উপরে বিস্তৃত। এর উচ্চতা আনুমানিক ৯০ ফুট পরিধিও ৩৬ ফুটের কম নয় । গাছটির শীর্ষভাগ থেকে শুরু করে নুয়ে পড়া ডালের পাতার ফাঁকে ফাঁকে বাতাসে দুলছে সবুজ রঙের আম। আমে টুইটুম্বুর পুরো গাছটি। আর এই গাছ থেকে লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রয়ের আশা করছেন গাছটি লীজ নেওয়া ব্যক্তি।
ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তে মন্ডুমালা গ্রামে অবস্থিত বৃহত্তম সূর্যপুরী আম গাছটির কথা। আমজানখোর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকালু মোহাম্মদ বলেন, অনেকের কাছে এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ আম গাছ হিসেবে পরিচিত। ঐহিত্যবাহী বিশ্ব পরিচিত প্রাচীন এই গাছটির আনুমানিক বয়স প্রায় ২৬০ বছরের কাছাকাছি। ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে এ গাছের দূরত্ব প্রায় ৩৬ কি.মি । প্রকৃতির নিজ খেয়ালে বেড়ে উঠা সবুজে ঘেরা সুদৃশ্য গাছটির ডাল পালা ও আম সকলের দৃষ্টি ও মনকে আর্কষণ করে। তাই এক নজর দেখতে বিভিন্ন দেশ ও জেলার দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসছেন অসংখ্য পর্যটক । সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁও জেলায় এবার কয়েকবার শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো-বাতাসে আম, লিচু সহ নানা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হলেও এ গাছটি আমে টুইটুম্বুর আছে। গাছটির কাণ্ড থেকে বের হয়েছে ২২ টি ডাল। ডাল গুলো কাণ্ড থেকে বেরিয়ে একটু উপরে উঠেই আবার ঢেউয়ের মতো মাটিতে নেমে গেছে। এমন দৃষ্টি জুড়ানো মনোমুগ্ধকর গাছটিকে দেখতে সুদূর আমেরিকান প্রবাসী ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু-কিশোর ও যুবক-যুবতীরা ছুটে এসেছেন। আমেরিকান প্রবাসী মো. নুরুজ্জামান পিতা-মৃত নজরুল ইসলাম বাড়ি দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মুখলেসুর লালদহ গ্রামের ।
আমেরিকায় থাকাকালীন তিনি ইউটিউবে এই গাছটির অনেক ভিডিও দেখেছেন। তখন থেকেই গাছটিকে স্বচক্ষে এক পলক দেখার জন্য আকুল ছিল তার মন। তার সাথে কথা হয়, তিনি বলেন, ‘কিছু দিন আগে আমেরিকা থেকে বাড়ি এসেছি। আজ শুধু এই গাছটিকেই ড়দেখার জন্য এখানে এসেছি। দেখে অনেক ভালো লাগলো। গাছটি অনেক পুরানো ও অনেক জায়গা নিয়ে বিস্তৃত। প্রচুর আম ধরেছে যা বলার মতো না। এমনি আরেকজন আমেরিকান প্রবাসী মো. মোজাফফর হোসেন বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলা সদরে। তিনি বলেন, ‘এতো পুরনো একটি আম গাছ এখনো আছে, যা কল্পনাই করা যায় না। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না, যে পুরনো একটি গাছে এতো আম ধরতে পারে। আমাদের এদিকে এক মাসের মধ্যে কয়েকবার ঝড় হয়েছে। এখানে আসতে আসতে অনেক আম গাছ চোখে পড়েছে কিন্তু এতো আম কোন গাছেই থাকতে দেখলাম না। এ গাছে এতো আম ধরছে যা কল্পনার বাইরে। কেউ নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করবে না। যা দেখে আমি খুবই মুগ্ধ।,পরিবার নিয়ে পঞ্চগড় বোদা থেকে এসেছেন মিজানুর রহমান । তিনি বলেন, ‘এখানে এসে সুন্দর ও অনেক বড় গাছটি দেখে খুব ভালো লাগছে। এখানে যারা আসবে তাদেরও ভালো লাগবে।, শহর থেকে ঠাকুরগাঁও মাদার তেরেসা বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আলো দাস। বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে ঘুরতে এসেছেন। আলো দাস বলেন, ‘এর আগে কখনোই এতো বড় গাছ চোখে দেখিনি। এখানে এসে দেখলাম। দেখে অনেক ভালো লাগলো। এই সূর্যপুরি জাতের গাছটির আম অনেক সুস্বাদু ও এর একেকটি আমের ওজন হয় প্রায় ২০০-২৫০ গ্রাম। আর মাত্র ১০-১৫ দিন গেলেই আম গুলো পরিপক্ক হবে ও বাজার জাত করা যাবে।
উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমানে এ গাছের মালিক দুই ভাই নূর ইসলাম ও সাইদুর রহমান। তাদের কাছ থেকে স্থানীয় আম ব্যবসায়ী সলেমান আলী নামে এক ব্যক্তি ৩ বছরের জন্য গাছটি লীজ নিয়েছেন। গত বছর আমের ফলন কম হওয়ায় কিছুটা লোকসান হয়েছে তার। এবার গাছে ব্যাপক আমের ফলন হওয়ায় লাভের আশা হকরছেন তিনি। সোলেমান আলী বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে আমের কোন ক্ষয়-ক্ষতি না হলে ৮০-১০০ মণ আম হতে পারে ধারণা করছি এর দামও এক লাখ টাকার ঊর্দ্ধে লাগবে।
বিখ্যাত এই আম গাছটির বয়স প্রায় ২৫০-২৬০ বছরের মতো উল্লেখ করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহা. যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘গাছটি ব্যক্তিমালিকাধীন হলেও আমি এই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় যোগদানের আগে সেখানকার উন্নয়নের বিষয়ে একটি পরিকল্পনার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তার পর থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন খবর পাওয়া যায়নি।, সূর্যপুরি জাতের এই আমগাছটিকে এশিয়া উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ গাছ বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে এটির কোন স্বীকৃতি আছে কিনা তা এই কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরণের কোন স্বীকৃতি আছে কিনা সেটি জানা নেই, লোকমুখে বলে। আসলে এটির আনুষ্ঠানিক কোন স্বীকৃতি আছে কিনা তা বলতে পারছি না।