বুধবার, নভেম্বর ৬, ২০২৪ ১১:২৩ অপরাহ্ণ
সর্বশেষ সংবাদঃ

বদলে যাচ্ছে পাঠ্যক্রম পরীক্ষা পদ্ধতি ও বই

অনলাইন ডেস্ক:

আসছে জানুয়ারি থেকে বিদ্যালয়ে বদলে যাচ্ছে পড়াশোনার প্রচলিত পদ্ধতি। বদলাবে পাঠ্যসূচি, পাঠ্যবই এমনকি পরীক্ষা পদ্ধতিও। কারণ, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে জানুয়ারিতে। শিক্ষার্থীদের ওপর কমবে পরীক্ষার চাপ। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ও পাঠের ভিত্তিতে প্রয়োগমূলক কাজের মধ্য দিয়ে করা হবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন।

নতুন শিক্ষাক্রমের আঙ্গিকে বর্তমানে নতুন পাঠ্যবই লেখার কাজ চলছে। যেটুকু লেখা হয়েছে তা নিয়ে ক্লাসরুমে পাইলটিং হচ্ছে। বছরের প্রথম দিনে তিনটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বই। ছাত্রছাত্রীরা সপ্তাহে একদিনের পরিবর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাবে শুক্র ও শনিবার দুই দিনের ছুটি।

নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোমলমতি শিশুদের কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। এর পরিবর্তে শ্রেণিকক্ষে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে তাদের। নতুন শিক্ষাক্রমে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাগুলো রাখা হয়নি। নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক- এই গ্রুপ বিভাজন রাখা হয়নি। শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ভিন্ন দুটি পাবলিক পরীক্ষায় বসতে হবে ছাত্রছাত্রীদের।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হবে ধাপে ধাপে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত, ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও অষ্টম এবং ২০২৫ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যকর হবে। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুলাই পর্যন্ত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতেও নতুন কারিকুলাম চালু হবে। তিনি জানান, প্রথম শ্রেণির সব বই লেখার কাজ শেষ। ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের পাইলটিং চলছে। নতুন বই দেওয়ার জন্য আমরা আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যবই মুদ্রণের দরপত্র আহ্বান এক মাস পিছিয়ে দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে বই লেখার কাজ শেষ হয়ে যাবে।

জানা গেছে, পরীক্ষা কমিয়ে নতুন শিক্ষাক্রমে ক্লাসরুমে ‘দক্ষতাভিত্তিক ধারাবাহিক মূল্যায়ন’ চালু হতে যাচ্ছে। প্রতি বিষয়ে পূর্ণমান ১০০ নম্বর থাকলেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় বিষয় ও শ্রেণিভেদে ৪০ থেকে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে। বাকি নম্বরের শিখনকালীন মূল্যায়ন করবেন শিক্ষকরা। নতুন এ পদ্ধতি চালুর জন্য খোলনলচে বদলে ফেলা হচ্ছে বিদ্যমান শিক্ষাক্রম। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা চলছে নতুন পাঠ্যবই।

নতুন কারিকুলাম চালুর প্রস্তুতি কতটুকু জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কনটেন্ট তৈরি, নতুন পাঠ্যবই মুদ্রণ এর সবই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে বিদ্যমান বিভিন্ন বিষয়ের নামও বদলে যাবে বলে জানান তিনি। ‘পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন হবে, সৃজনশীল পদ্ধতি থাকবে কিনা’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে কোনো তথ্য এখন আমরা দেব না। কিছু বললেই সেই আলোকে বাজারে নোটবই গাইডবই চলে আসে। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পরে সবাইকে জানাব।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম অনুসারে, শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান নাকি অন্য কোনো শাখায় পড়বে, তা নির্ধারণ করা হবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। দশম শ্রেণির আগে আর কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকছে না। শুধু দশম শ্রেণির কারিকুলামের ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। ২০২৪ সাল থেকে অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও ‘জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট’ (জেডিসি) এবং পঞ্চম শ্রেণির প্রাইমারি এডুকেশন সার্টিফিকেট (পিইসি) পরীক্ষা আর কেন্দ্রীয়ভাবে নেওয়া হবে না। বিদ্যালয়েই বার্ষিক পরীক্ষার মতো এসব শ্রেণির মূল্যায়ন করা হবে। তবে এসব শ্রেণিতে জেএসসি, জেডিসি ও পিইসি সনদ দেওয়া হবে।

আর প্রাথমিক স্তরে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষায়ই থাকবে না। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে। আর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পাবলিক পরীক্ষা হবে, অর্থাৎ প্রতি বর্ষ শেষে হবে পাবলিক পরীক্ষা। আর এই দুই পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে এইচএসসির চূড়ান্ত ফল ফল প্রকাশ করা হবে। ২০২৫ সালে গিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে নতুন শিক্ষাক্রম পুরোপুরি কার্যকর হবে।

মূল্যায়ন যেভাবে :

প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়েই ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে গিয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। আর ৪০ শতাংশ মূল্যায়ন হবে ক্লাস শেষে পরীক্ষার মাধ্যমে, যেটি সামষ্টিক মূল্যায়ন বলা হচ্ছে। ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। নবম ও দশম শ্রেণিতে কয়েকটি বিষয়ে শিখনকালে অর্ধেক মূল্যায়ন হবে এবং বাকি অর্ধেক সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩০ ভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন এবং ৭০ ভাগ সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে।

ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে হবে অভিন্ন ১০ বিষয় :ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। এরপর একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শাখা পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হবে। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কিছু অভিন্ন বই পড়তে হয় এবং নবম শ্রেণিতে গিয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা- এসব শাখায় ভাগ হয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত যে ১০টি বই পড়ানো হবে, সেগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। বর্তমানে এসব শ্রেণিতে ১২ থেকে ১৪টি বই পড়ানো হয়।

 

Check Also

নওগাঁ এডুকেশন ফাউন্ডেশনের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

নওগাঁ প্রতিনিধি: বেসরকারী কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে নওগাঁ এডুকেশন ফাউন্ডেশনের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *