নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
কারারক্ষী স্বামীর বিচার চাইতে গিয়ে জেলার কর্তৃক যৌন হয়রানির প্রস্তাব পাওয়ার অভিযোগ গৃহবধূ শাপলার। জেলারের এমন আচরণের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু এসব অভিযোগের পরও স্বামী আতিকুর ও জেলার শরিফুলের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কারারক্ষী স্বামীর নির্যাতনের বিচার চাইতে গিয়ে জেলারের কাছ থেকে যৌনতার প্রস্তাব পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শাপলা বেগম নামে এক গৃহবধূ।
সোমবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেন শাপলা। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের সাইদুর রহমানের মেয়ে।
এক কন্যাসন্তানের জননী শাপলা জানান, বগুড়া কারাগারে কর্মরত থাকা অবস্থায় কারারক্ষী স্বামী আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎকালীন জেলার শরিফুল ইসলামের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জেলার এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো তাকে যৌন প্রস্তাব দেন। স্ত্রীকে নির্যাতনে অভিযুক্ত কারারক্ষী আতিকুর রহমান বর্তমানে রাজশাহী কারাগারে কর্মরত। আর জেলার শরিফুল ইসলাম বর্তমানে নওগাঁ কারাগারের দায়িত্বে রয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে শাপলা অভিযোগ করেন, ২০১০ সালে নওগাঁ সদর উপজেলার চুনিয়াগাড়ী গ্রামের মোজাফফর হোসেনের ছেলে আতিকুর রহমানের সঙ্গে তার পাবিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর বাড়ি করার নামে তার প্রবাসী বাবা সাইদুর রহমানের কাছে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন আতিকুর। মেয়ের সুখের কথা ভেবে দাবি অনুযায়ী আতিকুরকে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দেন সাইদুর রহমান। তার পরও গাইবান্ধায় কর্মরত থাকা অবস্থায় স্ত্রীকে একাধিকবার নির্যাতন করেন আতিকুর। পরে বদলি হয়ে নাটোর ও বগুড়ায় থাকা অবস্থায় ঘুমন্ত স্ত্রীকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টাও চালান। নির্যাতনের কারণ খুঁজতে গিয়ে একপর্যায়ে শাপলা জানতে পারেন, নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে একাধিক মেয়ের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন স্বামী আতিকুর। এর প্রতিবাদ করলে স্ত্রীর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন আরও বেড়ে যায়।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট গ্রামের বাড়ি চুনিয়াগাড়ীতে নিয়ে শাপলাকে সাদা কাগজে সই করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। সই করতে রাজি না হলে পরিবারের লোকজনের সহযোগিতায় স্ত্রীকে মারধরও করেন। এ সময় প্রতিবেশীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে চণ্ডীপুর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান বেদারুল ইসলাম শাপলাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেন। লিখিত বক্তব্যে শাপলা আরও জানান, স্বামী আতিকুরের অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট বগুড়া কারাগারের জেলার শরিফুল ইসলামের কাছে যান তিনি। এ সময় জেলার শরিফুল তাকে একটি আলাদা কক্ষে নিয়ে যান এবং ফোনে থাকা অশ্লীল ছবি দেখিয়ে তাকে যৌনতার প্রস্তাব দেন। জেলারের এমন আচরণের বিরুদ্ধে পরে স্বরাষ্ট্র সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন শাপলা। কিন্তু এসব অভিযোগের পরও স্বামী আতিকুর ও জেলার শরিফুলের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ অবস্থায় স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর নওগাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলা করেন শাপলা।
আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি নওগাঁ সদর থানায় নথিভুক্ত হয় এবং ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি শাপলার স্বামী ও শাশুড়িকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত কর্মকর্তা। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে শাপলা বেগম বলেন, ‘মামলা করার পর থেকেই আমাকে ও আমার বাবা-মাকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। আতিকুর মামলার পিপিকে বলেছেন, তিনি নাকি জেলার শরিফুলের মধ্যস্ততায় দুই বছর আগে আমাকে তালাক দিয়েছেন। তালাকের মোহরানার ২ লাখ ২০ হাজার টাকাও নাকি পরিশোধ করেছেন। ‘মামলার পরবর্তীতে শুনানিতে জেলার শরিফুল নাকি এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হবেন।’ তালাক ও মোহরানা দেয়ার বিষয়টিকে স্বামী ও জেলারের সাজানো নাটক দাবি করে স্ত্রী-সন্তানের অধিকার, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার কামনায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন শাপলা।
স্ত্রীর অভিযোগ সম্পর্কে কারারক্ষী আতিকুর রহমান বলেন, ‘এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। যা বলার সেখানেই বলব।’
অভিযোগের বিষয়ে জেলার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বগুড়ায় কর্মরত থাকা অবস্থায় কারারক্ষী আতিকুরের স্ত্রী অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে একবার এসেছিলেন। আমি তাকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। তার সঙ্গে খারাপ আচরণের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’