রুহুল আমিন সরকার, বাগাতিপাড়া, নাটোর থেকে:
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার কাকফো গ্রামের ইমরান খান। লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ছুটেছেন। কিন্তু চাকরি না হওয়ায় হয়েছেন উদ্দ্যোক্তা। মাত্র ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন যাত্রা। ১২ বছরেই ইর্ষনীয় সাফল্যে পৌঁছেছেন। যিনি নিজে একসময় চাকরি খুজেছেন, তিনিই এখন ১৭ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তার অনুকরণীয় এই সফলতা দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছেন অনেক যুবকের।
ইমরান খান উপজেলার সদর ইউনিয়নের কাকফো গ্রামের মৃত বাবর আলী খানের ছেলে। সম্প্রতি কথা হয় ইমরান খানের সাথে। তিনি জানালেন, ১৯৯৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর ছাত্র জীবনেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে হয়েছিল ইমরান খানকে। চড়াই উৎরায় পেরিয়ে ২০০১ সালে লেখা পড়া শেষ করে চাকরির পেছনে অনেক ছুটেছেন। কিন্তু চাকরি না হওয়ায় হতাশ হননি। স্থানীয় সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুল ইসলামের পরামর্শে ২০০৯ সালে নাটোর যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হন। সেখানে গবাদী পশু ও হাঁস-মুরগী পালন, মৎস্য চাষ এবং তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও কৃষি বিষয়ক তিন মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। পরে মাত্র ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার কাকফো গ্রামে একটি শেডে প্রথমে এক হাজার ব্রয়লার মুরগীর খামার গড়ে তোলেন। লাভবান হওয়ায় পরবর্তীতে যুব উন্নয়নের ঋণ নিয়ে খামারের পরিসর বাড়ান। এভাবেই বর্তমানে ৬ টি শেডে তার ডিমের মুরগীর সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার, মাংসের মুরগীর সংখ্যা ১০ হাজার, বাচ্চা উৎপাদনের হ্যাচারীতে তিনটি চীনা ইনকিউবেটর, গরুর খামার, পুকুরে মাছ চাষ, মুরগী ও মাছের খাবার উৎপাদন ছাড়াও জৈব সার উৎপাদনকারী হিসেবে নিজের খ্যাতি অর্জন করেছেন। তার এই কর্মযজ্ঞে স্থানীয় অনেক যুবক খামার পেশায় নেমে নিজেদেরকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করেছেন। তার কাছ থেকেই এখন অন্য খামারীরা মুরগীর বাচ্চা ক্রয় করেন।
ইমরান খান জানান, করোনাকালে তিনি প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ক্ষতির মধ্যে পড়েছিলেন। তবে তা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাছাড়া তার এসব খামারে ১৭ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। এব্যাপারে বাগাতিপাড়া উপজেলা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, ইমরান খান একজন সফল আত্মকর্মী। তাদের যুব উন্নয়ন কার্যালয় থেকে ইমরান খানকে ঋণের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা হয়। তার এই সফলতার সুনাম জেলা-উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ইমরান খানের এই সফলতা তাদের বিভাগের উর্দ্ধতন একাধিক কর্মকর্তা পরিদর্শণ করেছেন। তার এই সফলতার কারনে তাকে সফল আত্মকর্মী হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে উর্দ্ধতন বরাবর পাঠানো হচ্ছে।