মোঃ মামুন অর-রশীদ, ঠাকুরগাঁও থেকেঃ
ঠাকুরগাঁওয়ে একটি কথিত কারখানায় ড্রামের ময়লাযুক্ত তেল বোতলে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুরের কৃষ্ণপুর গ্রামে গত একমাস যাবত চলছে এ কার্যক্রম।
কারখানায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাহির থেকে দরজা বন্ধ। শুধু গ্রিল গেট হালকা ফাঁকা। কারখানায় নেই কোনো সাড়াশব্দ ৷ একজনের অনুমতি নিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা গেল চারজন নারী শ্রমিক বোতলে তেল ভরছেন। দুজন ছেলে তেল প্যাকেট করছেন আর একজন নারী ও একজন পুরুষ সাদা বোতলে কোম্পানির লেবেল আঠা দিয়ে লাগাচ্ছেন। সেখানে দেখা যায়, ময়লাযুক্ত তেল একটি প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে বোতলে ভরছেন নারী শ্রমিকরা। চারদিকে নোংরা পরিবেশ। মেঝেতে তেল পড়ে স্যাঁতসেঁতে অবস্থা। যে লেবেল বোতলের গায়ে লাগানো হচ্ছে, তা আবার বিএসটিআইয়ের লোগো সংযুক্ত করা হয়েছে।
কারখানার মালিক কে?, জানতে চাইলে মালিক উপস্থিত থেকেও নিজের পরিচয় গোপন করেছেন। মালিক ডাক্তারের কাছে আছেন বলে এখানে-সেখানে ফোন করেন। এরই মধ্যে তিনি যে মালিক আশরাফুল ইসলাম তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। ময়লাযুক্ত তেল বোতলে ভরে প্যাকেজিং চলছে এই কারখানার সরকারি অনুমোদন আছে কি-না, বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে কি-না, এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে রাজি নন মালিক আশরাফুল ইসলাম। একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন তিনি পাননি। পরিবেশের ছাড়পত্রসহ আনুষঙ্গিক কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।
আশরাফুল বলেন, ‘গত দেড় মাস আগে প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়েছে, এখনও সব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সারাদেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই অনুমোদনহীন চলছে, আমারটা চললে সমস্যা কোথায়?’ এরপর আর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাৎক্ষণিক চলে যান তিনি। তেল বোতলজাত যারা করছেন এমন কোনো শ্রমিকই কথা বলতে রাজি হননি৷ তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আমি কাজ করে ২০০ টাকা পাই। এতে আমার না,পুষলেও অভাবের জন্য করি।’ স্থানীয় যুবক ফাইজান হাবিব বলেন, আমি একদিন রাত ১০টার দিকে তেলের গাড়ি দেখে থামাই। তখন জিজ্ঞাসা করি এসব ড্রামে কী? আর কোথায় যাচ্ছে? তারা বলেন, আশরাফুলের সয়াবিনের কারখানায় যাবে। আমি তাদের ছেড়ে দিয়ে ভাবি কারখানাতে তেল যাবে কেন? তারা তো তেল উৎপাদন করে বাইরে পাঠাবে। তখনই আমার সন্দেহ হয়। গোপনে এসব খোলা তেল তারা বোতলজাত করছে। অনুমোদন ছাড়া বিএসটিআইয়ের লোগো সংযুক্ত করা হয়েছে ।
স্থানীয় আরেক যুবক ফারহান হাবিব বলেন, এভাবে সরকারকে না জানিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা অন্যায়। সেইসঙ্গে খোলা নোংরা তেল মেশিনে পরিশুদ্ধ না করে বোতলজাত করছেন,এতে ভোক্তার সাথে ধোঁকাবাজি। অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।’
এবিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, যদি সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো কারখানা চলে থাকে, তবে সেটি অবৈধ। আমরা খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।