অনলাইন ডেস্ক:
সহিংসতা-জর্জরিত শ্রীলঙ্কা অব্যাহত কারফিউ এবং রাস্তায় রাস্তায় নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে যে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান হতে পারে। আজ বুধবার সহিংসতার খবর পাওয়া না গেলেও বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
শ্রীলঙ্কায় কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ চলছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতির প্রেক্ষাপটে রাস্তায় নেমে আসা জনসাধারণ বিশেষ করে সোমবার ভয়াবহ সহিংসতায় মেতে ওঠে।
সহিংসতায় সোমবার অন্তত ৯ জন নিহত হয়, আহত হয় দু’শতাধিক লোক। ক্ষুব্ধ জনতা রাজনীতিবিদদের অন্তত ৫০টি বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করলেও পরিবারটির ওপর ক্ষোভ হ্রাস পায়নি। সোমবার জনতা তাদের পৈত্রিক বাড়িটি জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া মহিন্দার সরকারি বাড়ির ওপরও হামলা চালানো হয়। তিনি সেনাবাহিনীর সহায়তায় সপরিবারে পালিয়ে যান। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ত্রিঙ্কোমালির একটি নৌঘাঁটিতে লুকিয়ে আছেন।
সহিংসতা থামাতে সৈন্যদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারফিউ থাকায় বুধবার তৃতীয় দিনের মতো দোকানপাট, অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিবিদদের একটি সভা সশরীরে না হয়ে অনলাইনে হয়।
কলম্বোর রাস্তায় রাস্তায় সৈন্য ও পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে বিরোধী রাজনীতিবিদরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দিয়েছে যে এই পরিস্থিতিকে সেনাবাহিনী যেন ক্ষমতা গ্রহণের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার না করে। ইতোমধ্যেই রাস্তায় রাস্তায় সৈন্যদের সাথে সাঁজোয়া যানের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে সামরিক অভ্যুত্থানের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
তবে প্রতিরক্ষাসচিব তা খারিজ করে দিয়েছেন। কমল গুনারত্নে বলেন, দেশে যখন বিপজ্জনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তখন তা সামাল দেয়ার জন্য সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা কোনোভাবেই ভাববেন না যে আমরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছি। সামরিক বাহিনীর এ ধরনের কোনো উদ্দেশ্য নেই।
এদিকে দেশজুড়ে চলা কারফিউ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সরকার চাইছে এর মধ্যে দেশটিতে সহিংসতার অবসান হোক। কলম্বোর বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার বিভিন্ন চিহ্ন এখনো রয়েছে। কোথাও বাস লেকে পড়ে আছে, জানালার কাচ ভাঙ্গা, এবং টায়ার এখনো জ্বলছে।
শ্রীলঙ্কা ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ভার অনেক বেড়ে গেছে। মানুষ হয়ে পড়েছে বিক্ষুব্ধ।
সরকার জরুরি আর্থিক সহায়তার আবেদন জানিয়েছে।
অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য কোভিডকে দায়ী করেছে সরকার, মহামারিতে দেশটির পর্যটন বাণিজ্য যা শ্রীলঙ্কার অন্যতম বৃহৎ বৈদেশিক আয়ের উৎস, তা প্রায় ধসিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাই এর অন্যতম কারণ।