অনলাইন ডেস্ক:
অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় টেকনাফের বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারণ চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। সোমবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন তিনি। এসময় বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদ তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১শে জুলাই রাতে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ। প্রদীপের পরিকল্পনায় সিনহাকে হত্যা করেন বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী। এই হত্যাকাণ্ডের পর গ্রেপ্তার হন ওসি প্রদীপ। আত্মগোপনে চলে যান ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণ। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি এই হত্যা মামলায় প্রদীপ-লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে ছয়জনের।
এদিকে ২০২০ সালের ২৩শে আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রম-২ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। পরের বছরের ২৬ জুলাই প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ১লা সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত।
দুদকের দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে বাড়ি, ৪৫ ভরি সোনা, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব ও কক্সবাজারে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে চুমকির নামে মামলায় তাকেও আসামি করা হয়। এই দম্পতির বিরুদ্ধে তিন কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী বলে দাবি করলেও তার এমন কোনো ব্যবসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক আদেশে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকী কারণের নামে থাকা চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় ছয়তলা বাড়িসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর দুদকের পক্ষ থেকে সম্পত্তি দেখভাল করতে রিসিভার নিয়োগ করার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ২৯ জুন প্রদীপ দম্পতির নামে থাকা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সম্পত্তি দেখভালের জন্য দুই জেলার ডিসিকে রিসিভার নিয়োগ করা হয়।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে আসামি উচ্চ আদালতে আবেদন করে মামলা থেকে অব্যাহতি চান। কিন্তু হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেন। এদিকে গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে প্রদীপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এ নিয়ে মামলাটিতে মোট ২০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হলো। এদিন প্রদীপ কুমারকে আদালতে হাজির করা হলেও তার স্ত্রী চুমকি কারণ গরহাজির ছিলেন।