অনলাইন ডেস্ক:
জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা দুর্নীতির মামলা সচলের উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের ১৫ বছর আগের পৃথক রিটের রুল শুনানির আবেদন করেছে দুদক। আজ (রবিবার) শুনানির জন্য হাইকোর্ট বেঞ্চের তালিকায় রয়েছে রিট মামলাগুলো। আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আগামী সপ্তাহে আবেদন করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
এছাড়া জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগে দুদকের মামলা বাতিলে ডা. জোবায়দা রহমানের করা লিভ টু আপিল সম্প্রতি খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে তারেকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের এ মামলা সচল হয়। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা বাতিলের আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য রয়েছে। এদিকে দুদকের এমন উদ্যোগের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপির আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, সরকার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে দুদককে ব্যবহার করে জিয়া পরিবারের সবার মামলা সচলের উদ্যোগ নিচ্ছে।
জানতে চাইলে খুরশীদ আলম খান বলেন, শুধু জিয়া পরিবার নয়, দুর্নীতিসংক্রান্ত পুরোনো সব মামলা সচলের উদ্যোগ নিয়েছে দুদক। কমিশন এ নিয়ে কাজ করছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমান ও তারেকের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান ছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদ, ব্যবসায়ী গিরিধারী লাল মোদীর মামলা শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট থেকে রুল জারি করা হয়। এ কারণে মামলার কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। সম্প্রতি রুল শুনানির উদ্যোগ নেয় দুদক।
দুদকের আইনজীবী বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া লিভ টু আপিল করেছিলেন। শুনানি হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। দুদক এ মামলার বাদী, আমরা মনে করেছি সেটি শুনানি হওয়া দরকার। তাই আগামী সপ্তাহে শুনানির জন্য আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে। আইনজীবী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদের বিরুদ্ধে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদের মামলার বৈধতা নিয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সেটি শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৯ মার্চ জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে এক বছরের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উত্তরা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক গিরিধারী লাল মোদীকে অর্থ পাচার মামলায় অব্যাহতির আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। এর বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে সেই আদেশ বাতিল করে রায় দেন হাইকোর্ট। জানতে চাইলে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল যুগান্তরকে বলেন, জিয়া পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। জিয়া পরিবারের ওপর সব দিক থেকে আঘাত করতে দুদক ও সরকার একাকার হয়ে গেছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে দুদককে ব্যবহার করছে সরকার।
লাখ লাখ মামলা ঝুলে আছে, সেদিকে নজর নেই দুদকের। সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে হঠাৎ করে তারা জিয়া পরিবারের সদস্যদের মামলা সচলের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে এক-এগারোর সময়ে করা সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্যদের মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। মিথ্যা মামলায় কোনোটার সাজা দেওয়া হয়েছে, আবার কোনোটার বিচার চলছে। বিএনপির সঙ্গে অবিচার করা হয়েছে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে সরকারি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সাজার বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্টে ১০ বছরের সাজা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর। এ সাজার বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন তিনি। এটি দ্রুত শুনানির জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০০৭ সালে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও হিসাব বিবরণীতে সম্পদ গোপন করার অভিযোগে মামলা ও এর প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের পক্ষে পৃথক রিট করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের নভেম্বরে হাইকোর্ট রুল দেন। রুলের ফলে মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। রিট মামলার রুল শুনানির জন্য আজ (২৯ মে) দিন ধার্য করেছেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চে রুল শুনানি হবে।
জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলা বাতিলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের করা আবেদন (লিভ টু আপিল) খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। ফলে তারেকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের এ মামলা সচল হয়। ১৩ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ রায় দেন।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা বাতিলের আবেদনের শুনানির জন্য ২৯ মে দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। ১৭ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন নির্ধারণ করেন।
সূত্র: যুগান্তর