বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি:
নাটোরের বাগাতিপাড়ার পেড়াবাড়ীয়া মডেল সরকরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি ও ভবণের দু’টি কক্ষ দখলের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত দখলকারীদের মধ্যে রয়েছে উপজেলা দূর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরাম।
আইসিটি ভবণ নির্মানের সময় বিদ্যালয়ে বারান্দা ভাঙ্গা হলেও টিন ও কাঠ কর্তৃপক্ষকে ফেরত না দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। তবে জমি দখলের অভিযোগ অস্বিকার করে দূর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির উপজেলা সভাপতি বজরং লাল গারোদিয়া দাবী করেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। পাশ্বে আমার জমি আছে ,তবে আমি স্কুলের কোন জমি দখল করি নাই।’
সূত্রে জানা যায়, পেড়াবাড়ীয়া মডেল সরকরী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯২৮ সালে স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যাক্তি মরহুম ফাঁকন আলী মন্ডল প্রায় ১.৪৩ একর সম্পত্তি দান করেন। উপজেলার সদর ও পৌরসভার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ওই সরকারী প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভবন রয়েছে। প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের শুরু করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ৯শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে একজন ব্যবসায়ী বজরং লাল গারোদিয়া বিরুদ্ধে। তিনি উপজেলা দূর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতিও বটে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কর্তৃপক্ষ দখলকারীকে বারবার বললেও তাদেরকে পাত্তা দেওয়া হয়না। শুধু তাই না সম্প্রতি উপজেলা দূর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারী মাহাতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ দখল করে ক্লাব বানানোর অভিযোগ উঠে।
অপরদিকে, উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের কার্যালয় করা হয়েছে আরেকটি কক্ষে। যার নেতৃত্বে রয়েছে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খোদেজা বেগম শাপলা দাবী। বিষয়টি নিয়ে পেড়াবাড়ীয়া মডেল সরকরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) রওশন কামাল রাক্কা দাবী করেন, ‘ প্রতিষ্ঠানের নিজ নামের ওই জমিটি দীর্ঘদিন বেদখলে আর কক্ষ দু’টি শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে থাকলেও বর্তমানে তা অন্যর দখলে। তারা প্রতিষ্ঠানকে কোন ভাড়া দেয়না। তাদের কোন বৈধ কাগজপত্র আছে কি না, তা আমার জানা নাই। গত কয়েকমাস পূর্বে আইসিটি ভবন করার সময়ে বিদ্যালয়ে পুরাতন ভবনের বারান্দার একাংশ ভাঙ্গা হলেও ঠিকাদাররা এখন পর্যন্ত টিন ও কাঠ প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দেয়নি।’
উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খোদেজা বেগম শাপলা দাবী, ‘কার্যালয়টি করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে, প্রয়োজনে অফিসটি স্থানান্তর করতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।’ প্রতিষ্ঠানটির সহ-সভাপতি ও দাতা সদস্য মুনতাজুর রহমান দাবী করেন, আমার বাবা মরহুম ফাকন আলী মন্ডল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ১.৪৩ একর জমি দান করেন। কিন্তু ০৯ শতক জমি দীর্ঘদিন যাবৎ বজরংলাল গারোদিয়া দখল করে রেখেছে। আবার দু’টি কক্ষের একটিতে মাহাতাব ক্লাব ঘর ও অপরটিতে ভাইস চেয়ারম্যান নারী উন্নয়ন ফোরাম অফিস করে রেখেছে। বেদখল করা জমি কক্ষ দু’টি যথাযত কর্তৃপক্ষ অতি সত্তর উদ্ধার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে দাবী করেন তিনি।
বাগাতিপাড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ইউসুফ আলী জানান,‘মূল ভবণের যে কক্ষ দু’টি দখল হয়েছে তা স্কুলের। আর জমি রেকড সহ যাবতীয় পেপার্স স্কুলের নামে আছে। তারপরেও অদৃশ্য কারনে জমি ও ভবনের কক্ষ দুটি উদ্ধার হচ্ছে না যা অত্যন্ত দুঃখ জনক। ’ এব্যাপারে বাগাতিপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘পেড়াবাড়ীয়া মৌজার ৯৮ ও ৯৯ নং দাগের ৯শতক জমি পেড়াবাড়ীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অদ্যবদি পর্যন্ত দপ্তরের মাধমে ধার্য্যকৃত কর পরিশোধ করা হয়। তবে জমিটি বেদখলে আছে তা অস্বিকার করার সুযোগ নেই। ’
উপজেলা সহকারী কমিশনার ভ‚মি নিশাত আনজুম অনন্যা জানান, ‘আমার দপ্তর থেকে কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্ধ দেয়া হয়নি। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন কক্ষ আমি বরাদ্ধ দিতেও পারিনা।” বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত আবেদন দিলেও তা আলোর মূখ না দেখায় হতাশ হওয়ার সাথে সাথে সমালোচনা শুরু হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।