মাশরেকুল আলম, জয়পুরহাট:
মধ্যপ্রাচ্যের সবজি স্কোয়াশ চাষ হচ্ছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায়। শীতকালীন এই সবজি অতি পুষ্টিকর, সু-স্বাদু, সল্পমেয়াদি, উচ্চ ফলনশীল, লাভ জনক স্কোয়াশ চাষ করে এলাকায় বেশ স্বনাম অর্জন করেছেন মো.সিরাজুল ইসলাম। বর্তমান তার ক্ষেতে বিষমুক্ত স্কোয়াশের ভালো ফলন হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজারে স্কোয়াশের ফল দাম ভালো থাকায় তিনি স্কোয়াশ বিক্রি করে অনেক আয়ও করছেন। তার এই সাফল্যে দেখে গ্রামের অন্যান্য কৃষকেরা স্কোয়াশ চাষের আগ্রহী হয়ে উঠলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়মিত মাঠে না থাকায় এবং পরে তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েও না পাওয়ায় হতাশ স্কোয়াশ চাষীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের মাত্রাই তালুকদার পাড়া উত্তর দিকে সবুজ মাঠ পেরিয়ে আঁকাবাঁকা জমির আলপথ ধরে সামনে এগিয়েই শঙ্কুর মাঠে চোখধাঁধানো বিদেশি স্কোয়াশ সবজির রাজ্য। এ বিদেশি স্কোয়াশ সবজির বীজ জমিতে রোপনের অল্প দিনের মধ্যেই গাছগুলো বেড়ে ওঠেছে। সেই স্কোয়াশের গাছে গাছে অসংখ্য হলুদ রঙ্গের ফুল ফুটে আছে আর গাছের নিচে গোড়ায় গোড়ায় বোটা লাগানো ছোট বড় অনেক স্কোয়াশ ফল। কোনটির ওজন এক থেকে তিন-কেজির মতো। এই সবজিটি দেখতে অনেকটা শশার মত মনে হয় কিন্তু আকারে অনেক বড় এবং বাইরের ত্বক শশার মত হলেও এই সবজিটির আকৃতি একটা বড় সরু মিষ্টি কুমড়ার মতো। এখানকার কৃষকেরা ব্যস্ত বিদেশি স্কোয়াশ সবজি চাষে। তাদের কোনো প্রশিক্ষণ লাগেনি। তাই নিজেরাই বীজ সংগ্রহ করে নেমে পড়েছেন স্কোয়াশ চাষে।
সেখানে দেখা হলো স্কোয়াশ চাষী মো.সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি স্কোয়াশ চাষের সফলতা নিয়ে বলেন, এক সময় সবজির ব্যবসা করতাম। সেই সময় জয়পুরহাট সবজি কিনতে গিয়ে সেখানে স্কোয়াশ সবজি দেখতে পাই। কিন্তু কি ভাবে স্কোয়াশ চাষ করা হয় তা আমার জানা ছিলোনা। কৃষি বিভাগের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠে না পেয়ে এবং পরে তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েও না পেয়ে বাধ্য হয়ে জয়পুরহাট বীজ দোকানগুলো থেকে পরামর্শ নিয়ে নিজ চেষ্টায় গত বছরে অগ্রায়ণ মাসে জয়পুরহাট থেকে ১০ গ্রাম বীজ কিনে নিজের ১০শতক জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে স্কোয়াশ রোপণ করি। চারা রোপণের প্রায় ৪৮ দিনের মধ্যেই গাছে একাধিক স্কোয়াশ ফল ধরতে শুরু করে। প্রতিটি স্কোয়াশের ওজন প্রায় ১ থেকে ২ কেজি হতেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি শুরু করি। ১০ শতাংশ জমিতে সবজির পরিচর্যা, বীজ ও সার ক্রয়সহ প্রায় ৩ থেকে ৪ টাকা খরচ হয়। কিন্তু সেই খরচের তুলনায় লাভ হয় চার গুণ। এবারে ৪০ শতক জমি বর্ঘা নিয়ে অগ্রায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে স্কোয়াশের বীজ রোপণ করি। সেই জমিতে প্রায় ১হাজার ৭শ বীজে প্রায় ১হাজার ৬শ চারা গজে উঠে। রোপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে।
পরাগায়নের ৮-১০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করি। পূর্ণবয়স্ক একটি স্কোয়াশ গাছ অল্প জায়গা দখল করে। একেকটি গাছের গোড়ায় ৬ থেকে ৮টি ফল বের হয়। প্রতিটি স্কোয়াশ ফল গড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করি। এ সবজিতে নামমাত্র রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে বিষমুক্ত স্কোয়াশ চাষ করেছি। ৪০ শতক জমিতে এই পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে সেই জমি থেকে প্রায় ৬ হাজার টাকা স্কোয়াশ বিক্রি করেছি। আগামী প্রায় ৫ সপ্তাহ এই স্কোয়াশ বিক্রি হবে। প্রতি সপ্তাহে তিন বার করে ক্ষেত থেকে স্কোয়াশ সংগ্রহ করা যায়। বর্তমান পাইকারী বাজারে স্কোয়াশ ফল দাম অনেক ভাল। আশা করছি সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ হবে।
স্কোয়াশ চাষ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.শরিফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, শঙ্কুর মাঠে স্কোয়াশ চাষ হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে আমি মাত্রাই ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি।
স্কোয়াশের পুষ্টি সম্পর্কে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাঃ আশিক আহমদ জেবাল বাপ্পী বলেন, প্রতিটি স্কোয়াশ ফলে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই ও ভিটামিন বি-৬। স্কোয়াশ ফলে নায়াসিন, থায়ামিন, প্যানথোটোমিন এসিড ও ফলিড রয়েছে। এছাড়াও অনেক মিনারেলস রয়েছে। যেমন রয়েছে- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, খনিজ, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, আয়রন, ক্যারোটিনয়েড এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান।
স্কোয়াশ ফল প্রতিদিন খেলে ডায়েট কন্ট্রোল করে। তাছাড়া নিয়মিত স্কোয়াশ খেলে ফ্রি রেডিকেলসের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
কালাই উপজেলার কৃষি অফিসার মোছা.নীলিমা জাহান বলেন, স্কোয়াশ মূলত একটি শীতকালীন ও বিদেশি জাতের সবজি। এটি মিষ্টি কুমড়ার মতো সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। মধ্যপ্রাচ্যের এই স্কোয়াশ চাষ অল্প খরচের ফসল। দ্রুত বর্ধনশীল একটি সবজি ও অল্প পরিশ্রমেই অধিক আয় করা সম্ভব। এ ফসলে কোনো রোগের উপদ্রব তেমন নেই। দেশের প্রচলিত কোনো সবজির এমন ভালো উৎপাদন ক্ষমতা নেই। স্কোয়াশ চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে কৃষি অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে।