অনলাইন ডেস্ক:
আজ বহু আক্সক্ষাখিত সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন আজ। যার হাতে পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর হয়েছে, সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়েই সেতুটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হচ্ছে।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তের অনুষ্ঠানস্থলে আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোয়া ১০টায় বক্তব্য রাখবেন তিনি। বক্তব্য শেষে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন তিনি। পরে সেখানে মোনাজাত হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে জাজিরা প্রান্তে এসে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। এরপর বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে তার। সেখানে লোক সমাগমের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে ১০ লাখ মানুষের। ফলে ক’দিন ধরেই মাওয়া-জাজিরায় সাজ সাজ রব শুরু হয়েছে। সবার অপেক্ষার ইতি ঘটবে আজ। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটি তৈরি করেছে চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হবে। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত এবং অপর অংশ নদীর ওপারে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত রয়েছে। একই সাথে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এ সেতুতে। চার লেন বিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেললাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর পাইলিং ও নদীশাসনের কাজ উদ্বোধন করেন। এরপর একে একে সব ধাপ পেরিয়ে পদ্মার বুকে ৪২টি পিলারের ওপর দৃশ্যমান হয়ে ওঠে স্বপ্নের সেতু। একটি পিলার মাটির নিচের ৪২ তলা ভবনের সমান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সেতু চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১.২ থেকে ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
নির্মাণের ইতিহাস : ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে জাপান সফর করেন। সে সময় পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। জাপান সরকার দু’টি নদীর ওপরই সেতু নির্মাণে রাজি হয়। যেহেতু পদ্মা অনেক খর¯্রােতা, বিশাল নদী, তাই পদ্মা নদীর সমীক্ষা শুরু করে। আর রূপসা নদীর আগেই নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০০১ সালে পদ্মার নদীর ওপর সেতু নির্মাণ সমীক্ষার তথ্য দেয়া হয়। জাপানের সমীক্ষায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচন করা হয়। এই সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার ২২ দিনের মাথায় পদ্মা সেতুর পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরির জন্য নিউজিল্যান্ডভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মনসেল এইকমকে নিয়োগ দেয়া হয়। শুরুতে সেতু প্রকল্পে রেল চলাচলের সুবিধা ছিল না। পরে রেলসুবিধা যুক্ত করে চূড়ান্ত নকশা প্রণয়নের নির্দেশ দেয়া হয়।
২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়ে যায়। পরের বছর জানুয়ারিতে ডিপিপি সংশোধন করা হয়। সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ ছিল। শুরুতে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক পাঁচ-আট কিলোমিটার। পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক এক-পাঁচ কিলোমিটার হয়।
প্রথম ডিপিপিতে সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে তিনটির নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা রেখে নকশা করা হয়েছিল। পরে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের সুযোগ রাখার বিষয়টি যুক্ত করা হয়।
সংশোধিত ডিপিপিতে বেশি ভার বহনের ক্ষমতাসম্পন্ন রেল সংযোগ যুক্ত করা হয়। কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো যুক্ত হয়। সেতু নির্মাণে পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও বাড়তি গভীরতা ধরা হয়। বাড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ব্যয়ও।
২০১৬ সালে যখন ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়, তখন মূল সেতু নির্মাণ, নদীশাসনসহ সব কাজের ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে যায়। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রায় ৯ টাকা কমে যায়। ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ নতুন করে যুক্ত হয়। মূল সেতু, নদী শাসন ও সংযোগ সড়কে যে পরিমাণ অর্থে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছিল তা থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যায়। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণে খরচ বাড়ে, ফেরিঘাট সরাতে ব্যয় হয় এবং নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়।
২০১৮ সালে সর্বশেষ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পায় জমি অধিগ্রহণের কারণে।
এর আগে ২০০৮-০৯ সালে প্রকল্প প্রস্তুতির সাথে যুক্ত কিছু লোকের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বব্যাংক তার ঋণ প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয় এবং অন্যান্য দাতা সেটি অনুসরণ করে তাদের অর্থায়ন ও প্রত্যাহার করে। এই ঘটনায় তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে নেয়া হয় এবং তৎকালীন সেতু সচিব মোশারেফ হোসেন ভূইয়াকে জেলে পাঠানো হয়। পরে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ প্রমাণ না পাওয়ায় কানাডীয় আদালত মামলাটি বাতিল করে দেয়। দুর্নীতির অভিযোগ পরে আদালতে প্রমাণিত হয়নি। পরে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সম্পদ থেকে অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১২ সালের ৯ জুলাই মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নকশা প্রণয়ন : পদ্মা বহুমুখী সেতুর সম্পূর্ণ নকশা প্রণয়নে এইসিওএমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পরামর্শকদের নিয়ে একটি দল গঠিত হয়। বাংলাদেশের প্রথম বৃহৎ সেতু পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল তৈরি করা হয়। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। এ প্যানেল সেতুর নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তা, নকশা পরামর্শক ও উন্নয়ন সহযোগীদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করে।
কর্মপরিকল্পনা
পদ্মা সেতুর ভৌত কাজকে মূলত পাঁচটি প্যাকেজে ভাগ করা হয় যথা (ক) মূল সেতু, (খ) নদী শাসন, (গ) জাজিরা সংযোগকারী সড়ক, (ঘ) টোল প্লাজা ইত্যাদি। মাওয়া সংযোগকারী সড়ক, টোল প্লাজা ইত্যাদি এবং মাওয়া ও জাজিরা সার্ভিস এলাকা। প্রকল্পে নিয়োজিত নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘মনসেল-এইকম’ ভৌত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রাক-যোগ্যতা দরের নথি প্রস্তুত, টেন্ডার আহ্বানের পর টেন্ডার নথি মূল্যায়ন, টেন্ডার কমিটিকে সহায়তাসহ এ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল নকশা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাজ তদারক করে। ভৌত কাজের বিভিন্ন প্যাকেজের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি।
পাইলিংয়ের সমস্যা : প্রথম দিকে সেতু নির্মাণকারী প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞদের পদ্মা নদীর তলদেশের মাটি খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। তলদেশে স্বাভাবিক মাটি পাওয়া যায়নি। সেতুর পাইলিং কাজ শুরুর পরে সমস্যা দেখ দেয়। প্রকৌশলীরা নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটির বদলে নতুন মাটি তৈরি করে পিলার গাঁথার চেষ্টা করেন। স্ক্রিন গ্রাউটিং নামের এই পদ্ধতিতেই বসানো হয় পদ্মা সেতু। এ প্রক্রিয়ায় ওপর থেকে পাইপের ছিদ্র দিয়ে রাসায়নিক নদীর তলদেশে পাঠিয়ে মাটির শক্তিমত্তা বাড়ানো হয়। তারপর ওই মাটিতে পিলার গেঁথে দেয়া হয়। এ পদ্ধতিতে পাইলের সাথে স্টিলের ছোট ছোট পাইপ ওয়েল্ডিং করে দেয়া হয়।
নির্মাণব্যয় : পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট খরচ করা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতনভাতা ইত্যাদি। বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সাথে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।
অসংখ্য জিও ব্যাগ : পদ্মা সেতুর নদীশাসনে প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ জিও ব্যাগ ব্যবহার হয়েছে। এর কোনো কোনোটির ওজন ৮০০ কেজি। কিছু আবার ১২৫ কেজির। এসব জিও ব্যাগে বালু ভরে নদীর তলদেশে ফেলা হয়েছে। নদীতে পাথর ফেলা হয়েছে প্রায় সোয়া ১০ লাখ ঘনমিটার।
সেতুর বিশ্ব রেকর্ড : জানা গেছে, এই সেতুতে ব্যবহৃত ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ এর সক্ষমতা ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
এই সেতুতে ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ওজনের একেকটি বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে। পৃথিবীতে এর আগে কোনো সেতুতে এত বড় বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি।
সেতু নির্মাণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রেন ব্যবহার করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে পদ্মা সেতু। পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি আনা হয়েছে চীন থেকে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এ খাতে সাড়ে তিন বছরে মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
পদ্মা সেতু নির্মাণে কংক্রিট ও স্টিল উভয়ই ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বে আর কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিল একসাথে ব্যবহার করা হয়নি। অর্থাৎ সেতুগুলো হয় কংক্রিটে নির্মিত, না হয় স্টিলের।
সেতু নির্মাণে ১৪ কিলোমিটার (১.৬ কিলোমিটার মাওয়া প্রান্তে ও ১২.৪ কিলোমিটার জাজিরা প্রান্তে) এলাকা নদী শাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এই নদী শাসনে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি। পদ্মা সেতু প্রকল্প তিন জেলায় বিস্তৃত। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, শরীয়তপুরের জাজিরা এবং মাদারীপুরের শিবচর। ভাঙনসহ কোনো কারণে পদ্মা সেতু যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্যই নদী শাসন করা হচ্ছে।
এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দিন : প্রধানমন্ত্রী
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ ‘পদ্মা সেতু’ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার দিনকে বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন।
আজ শনিবার ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘ দেশপ্রেমিক জনগণের আস্থা ও সমর্থনের ফলেই আজকে উন্নয়নের এ নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। আগামী দিনেও গণমানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন পূরণে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব।
‘পদ্মা সেতু’ যান চলাচলের জন্য আজ খুলে দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জিং ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নে নিয়োজিত সর্বস্তরের দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী, পরামর্শক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত সেনাবাহিনী ও নির্মাণ শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের অবদান ও অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য অভিবাদন জানান। সেতুর দুই প্রান্তের জনগণ জমি প্রদানের মাধ্যমে এবং নানাভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এ মাহেন্দ্রক্ষণে দেশবাসীকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানীর সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো। বিপুল সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলের বহুমুখী উন্নয়নে এই সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে শিল্পায়ন ও পর্যটন শিল্পে অগ্রসর এ অঞ্চলের উন্নয়নে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। টুঙ্গীপাড়াস্থ জাতির পিতার সমাধিসৌধ, সুন্দরবন এবং কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ নানা প্রত্নতাত্ত্বিক ও দর্শনীয় স্থানগুলোতে পর্যটকের আগমন বৃদ্ধি পাবে। নদী বিধৌত উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য সম্পদ আহরণ এবং দেশব্যাপী দ্রুত বাজারজাতকরণে পদ্মা সেতু বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
টোল আদায় : পদ্মা বহুমুখী সেতু ব্যবহারের জন্য এরই মধ্যে টোল ঘোষণা করেছে সরকার। গত ১৭ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেতু পার হতে মোটরসাইকেল ১০০ টাকা, গাড়ি ও জীপ ৭৫০ টাকা।
পিকআপ ১,২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১,৩০০ টাকা, ছোট বাস (৩১-সিটের জন্য ১,৪০০ টাকা), মাঝারি বাস ২,০০০ টাকা, (৩২ আসনের বেশি) বড় বাস (তিন-অ্যাক্সেল) ২,৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ছোট ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) ১,৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৫-৮ টন) ২,১০০ টাকা এবং ৮-১১ টন ওজনের ট্রাক ২,৮০০ টাকা, ট্রাক (থ্রি-অ্যাক্সেল) ৫,৫০০ টাকা এবং ট্রেলার (চার-অ্যাক্সেল) ৬,০০০ টাকা।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয় যে চার-অ্যাক্সেল ট্রেলারের উপরে প্রতিটি এক্সেলের জন্য ৬,০০০ টাকার সাথে অতিরিক্ত ১,০০০ টাকা যোগ করা হবে।