অনলাইন ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে চীনের হুমকির পরও তাইওয়ান সফর করায় অঞ্চলটিতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানাতে তাইওয়ান ঘিরে থেকে আকাশ ও সমুদ্রে ৬ দিনের নজিরবিহীন সামরিক মহড়া চালাতে শুরু করেছে চীন।
বৃহস্পতিবার মহড়া থেকে যে কোনো সময় সংঘাতে রূপ নেওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। খবর বিবিসির।
বুধবার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর শেষ করার কিছুক্ষণ পরই দেশটির স্বঘোষিত আকাশ-প্রতিরক্ষা সীমার ভেতরে ঢুকে পড়ে ২৭টি চীনা যুদ্ধবিমান।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলা হয়েছে, চীনের বিমান, ড্রোন, দূরবর্তী কিনমেন দ্বীপের ওপর দিয়ে উড়েছিল। পরে তাদের দেশের সামরিক বাহিনী বিমানটিকে তাড়িয়ে দিতে অগ্নিশিখা ছুড়েছে। যে কোনো হামলা মোকাবিলায় তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানায়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন পেলোসির সফরের বিরুদ্ধে তাদের এই প্রতিবাদী মহড়া থেকে পুরোদস্তুর সংঘাতে জড়িয়ে পড়া এড়াতে চাইলেও পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে ওঠার ঝুঁকি রয়েছে।
চীন বলেছে, সামরিক মহড়াটি বিশ্বের ব্যস্ততম জলপথের কয়েকটি স্থানে অনুষ্ঠিত হবে এবং মহড়াতে দূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংঘর্ষ এড়াতে তাইওয়ান বিমান চলাচলের বিকল্প রুট খুঁজছে। প্রতিবেশী জাপান ও ফিলিপাইনের সঙ্গে বিকল্প রুটে বিমান চলাচলের জন্য আলোচনাও করেছে।
তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেন, তার দেশ বড় ধরনের সামরিক হুমকির মুখে রয়েছে। তবে তাইওয়ান পিছু হটবে না।
তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ তাইওয়ান প্রণালীর নিরাপত্তাকে বিশ্বব্যাপী মনোযোগের আরেকটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। এই দ্বীপের ওপর যে কোনো আগ্রাসন সমগ্র ইন্দোপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
চীন সরকারের কাছে তাইওয়ান ইস্যু অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাইওয়ানের বেলায় তারা ‘এক চীন নীতি’ অনুসরণ করে। চীনের বৈদেশিক সম্পর্কের বিষয়টিও তাদের ‘এক চীন নীতির’ ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থায় তিন নম্বরে থাকা পেলোসির তাইওয়ান সফরকে চীন তাদের অভ্যন্তরীন বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ এবং সর্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি বলে বিবেচনা করেছে।
এদিকে পরিস্থিতি শান্ত করার প্রয়াসে জি৭ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা (কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র) একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, চীনের এমন কর্মকাণ্ডের অঞ্চলটিতে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি তৈরি করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তাইওয়ান প্রণালীতে আক্রমণাত্মক সামরিক তৎপরতার অজুহাত হিসেবে সফরকে ব্যবহার করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমাদের দেশের আইনপ্রণেতাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করার স্বাভাবিক রুটিন ছিল এটি।
চীনের ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার চীনের নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, রকেট ফোর্স, স্ট্রাটেজিক সাপোর্ট বাহিনী এবং জয়েন্ট লজিস্টিক সাপোর্ট ফোর্স তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণপশ্চিম এবং দক্ষিণপূর্বে আকাশ ও সমুদ্রে মহড়ায় অংশ নিয়েছে।
মহড়ায় চীনের সেনাবাহিনী অবরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন ছাড়াও সমুদ্র ও ভূমি থেকে আক্রমণ চালানোর অনুশীলন করবে।
তাইওয়ান বলছে, সামরিক মহড়া চলাকালে ওই এলাকায় বিদেশি জাহাজ ও বিমান প্রবেশ না করাতে বলেছে বেইজিং। বিশ্ববাণিজ্যে তাইওয়ান ও এর আশপাশের জলসীমা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট। চীনের এমন পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।