শেরপুর (বগুড়া)প্রতিনিধি:
বগুড়ার শেরপুরে সমঝোতা বৈঠকের পরদিনই আবারও আদিবাসী ও গ্রামবাসীর মধ্যে হামলা-ভাঙচুর ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত পাঁচজন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত দুইজনকে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- ভবানীপুর ইউনিয়নের গোমরতা গ্রামের মৃত বিজয় সিংয়ের ছেলে উজ্জল সিং ও তাঁর ভাই সুর্জয় সিং।
বুধবার (১১জানুয়ারি) সকাল আটটার দিকে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আম্বইল গ্রামের মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজিব শাহরিয়ারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
এদিকে ওই সংঘর্ষের ঘটনার পর স্থানীয় গ্রামের মসজিদের মাইকযোগে প্রচার চালিয়ে হাজারো মানুষকে জড়ো করা হয়। পাশাপাশি আদিবাসী পল্লীর কয়েকশ’ নারী-পুরুষ নিজেরাও আত্মরক্ষায় অবস্থান নেন। ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বাঁধার শঙ্কা দেখা দেয়। তবে এই খবর পেয়েই উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ এড়াতে দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এরপরও এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সেইসঙ্গে গ্রামবাসীর মাঝে চাপা ক্ষোভ এবং আদিবাসীদের সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক তৈরী হয়েছে। এমনকি নিরাপত্তাহীনতায় আদিবাসীরা স্থানীয় বাজার ও কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। এতে করে কার্যত গ্রামেই অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আম্বইল মৌজায় শতবিঘা জমির মালিকানা নিয়ে স্থানীয় চার গ্রামবাসীর সঙ্গে আদিবাসীদের বিরোধ চলে আসছে। এমনকি ওইসব জমি নিয়ে আদালতে একাধিক মামলাও বিচারাধীন রয়েছে। বিগত পাঁচ-ছয়দিন ধরে বিবাদমান জমির দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (১০জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করা হয়। কিন্তু পরদিনই আবারও তাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। আদিবাসী পরিষদের বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি সন্তোষ সিং অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার দিন সকালে দুই ভাই উজ্জল ও সুজর্য় কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পূর্ব শক্রতার জেরে আম্বইল গ্রামের ওমর ফরুক ও তার লোকজন তাদের পথরোধ করে পিটিয়ে মাথা ফেটে দেয়। খবর পেয়ে আদিবাসীরা তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। এসময় আম্বইল গ্রামসহ আশপাশের চারটি গ্রামের মসজিদের মাইকযোগে লোকজন ডেকে আনা হয় এবং তাদের বাড়ি-ঘরে হামলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরে ঘটনাটি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের জানানো হয়। আদিবাসী পরিষদের এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চক্রান্ত চলছে।
ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করে মাহবুবার রহমান স্বপন, হাফিজুর রহমান, সোলায়মান আলী এটি করছেন। তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র মহড়া, হুমকি-ধামকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। এমনকি ভয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে বাজারে যেতে ও কর্মস্থলে যেতে পারছেননা তারা। কার্যত অবরুদ্ধ জীবন-যাপন করছেন বলে অভিযোগ করেন তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আম্বইল গ্রামের সোলায়মান আলী মাষ্টার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সমঝোতা বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা মেনে নিয়েছেন। সে অনুযায়ীই কাজ করছেন তারা কিন্তু বুধবার সকালের দিকে প্রতিবন্ধী ওমর ফারুককে মারপিট ও তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন। মূলত এই কারণেই এলাকায় উত্তেজনা তৈরী হয়। তবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর হস্তক্ষেপে দুই পক্ষের মধ্যে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, আম্বইল গ্রামে উভয়পক্ষই মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে-এমন খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যাই এবং তাদের শান্ত করি। তাই বড় কোনো অপ্রীতিরকর ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এরপরও সংঘর্ষ এড়াতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।