অনলাইন ডেস্ক:
ঈদের পরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কভিড-১৯ মহামারি পূর্ববর্তী সময়ের মতোই সব ধরনের যোগাযোগ খুলে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার একদিনের ঢাকা সফরে এসে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর।
তিনি বলেন, আমি এবার ঢাকায় এসেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানাতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সুবিধাজনক সময়ে দিল্লি সফর করবেন। তার সফরের সময়ে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরামর্শক কমিটির সভাও অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বাণিজ্য সম্পর্কিত সহযোগিতার বিষয়টি বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভূটান-ইন্ডিয়া-নেপাল) ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় চলছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যমান বড় বড় ইস্যুর সমাধান হয়েছে। ছোট-খাটো ইস্যুগুলোরও সমাধান হবে। এর আগে র্যা বের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জানিয়েছিলেন। সেই সহযোগিতা কীভাবে করবে ভারত- জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেই প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন।
এর আগে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহন করা ভারতের বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমান ঢাকায় এসে অবতরণ করে। কুর্মিটোলা বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ঢাকায় পৌঁছেই এস জয়শংকর গণভবনে যান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এ সময় তিনি শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের জন্য সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন। পরে তিনি গণভবন থেকে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আসেন। এখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকের পর এখানেই যৌথ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রথমেই বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। তিনি বলেন, দুই বন্ধু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে বর্তমানে সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় চলছে। এ অধ্যায়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সবক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার হয়েছে। এ সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনেক বড় ইস্যুর সমাধান হয়েছে। আশা করা যায়, ছোট-খাট যেসব ইস্যু আছে, দ্রুত সেগুলোরও সমাধান হবে। এরপরই তিনি বক্তব্য দেওয়ার জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি এবার ঢাকায় এসেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষ থেকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানাতে। আমি সেই আমন্ত্রণপত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে একই বছরে ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির ওই বছরে এ ঘটনা ছিল অনন্য ও ঐতিহাসিক। তিনি আশা করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরবর্তী দিল্লি সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক আরও নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে এস জয়শংকর বলেন, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময়ে দুই দেশের যৌথ পরামর্শক কমিটির সভা, এ অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সহযোগিতা, কভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা, যোগাযোগ সহযোগিতা এবং জণগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ বৃদ্ধি বিষয়ক আলোচনা হয়েছে।
তিনি জানান, ঈদের পরই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কভিড-১৯ মহামারি পূর্ববর্তী সময়ের মতো সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এছাড়া এ অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সহায়তার বিষয়টি বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভূটান-ইন্ডিয়া-নেপাল) ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে, সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি এও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত একে অপরের পরীক্ষিত বন্ধু। এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক উত্তোরত্তর আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে, সেটাই তিনি প্রত্যাশা করেন। এর আগে র্যা বের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ তুরে ধরে ভারত সহযোগিতা কীভাবে করবে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেই প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন দিন দিন নিকটবর্তী হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রধামমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের বিশেষ কোন রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে কি-না জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তিনি তার সুবিধাজনক সময়ে দিল্লি সফর করবেন। অতএব এ প্রশ্নটি এ মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক নয়।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে র্যা বের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সহায়তার জন্য ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে কোনো অনুরোধ পেয়েছে কি-না জানতে চেয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, এই মুহূর্তে ভারতের পররাষ্টমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ঢাকায় রয়েছেন। ওই সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গেও দেখা করবেন। ফলে দিল্লিতে বসে বিষয়টা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। আগে থেকেই এ বিষয়ে ভারত কোনো অনুরোধ পেয়েছিল কি-না, সেটাও এখন বলাটা ঠিক হবে না। কারণ সত্যিই কোনো দেশ যদি এ রকম অনুরোধ জানিয়েও থাকে এবং তার ভিত্তিতে কোনো পদক্ষেপ যদি নেওয়াও হয়, সেটা বোধ হয় প্রকাশ্যে নাও জানাতে পারি।