অনলাইন ডেস্ক:
বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, শাসক দলের পরিবার সদস্য, বড় ব্যবসায়ী, সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তা, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের অফশোর কোম্পানিতে গোপন বিনিয়োগের তথ্য ফাঁস করা প্যান্ডোরা পেপারস খ্যাত নথিতে আরও তিন বাংলাদেশির নাম এসেছে।
নতুন তালিকায় আসা তিন বাংলাদেশি হলেন, ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএসের এস হেদায়েত উল্লাহ, এস রুমি সফিউল্লাহ এবং সিলেটের শাহজালাল উপশহরের স্প্রিং গার্ডেনের বাসিন্দা শাহিদা বেগম শান্তি। হেদায়েত ও সফিউল্লাহ একই পরিবারের সদস্য।
মঙ্গলবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেশন জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)।
প্রথম দুইজনের ঠিকানা ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএস এর নর্দার্ন রোডের বাড়ি নং ১০৫, ৩/এফ। এরা বিনিয়োগ করেছেন হংকংয়ের ট্রান্সগ্লোবাল কনসাল্টিং (এইচকে) লিমিটেড নামক কোম্পানিতে।
এস রুমি সাইফুল্লাহ হলেন ভিনসেন্ট নামে একটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি তরুণ পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদের সংগঠন জুনিয়র চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশের (জেসিআই বাংলাদেশ) সাবেক সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
এ ছাড়া সুইজারল্যান্ডকেন্দ্রিক এমজিআই মিডিয়া এজির আঞ্চলিক পরামর্শক এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ওয়েস্ট কনসার্নের পরামর্শক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। প্যান্ডোরা পেপারসে নাম আসার বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
শাহিদা বেগম শান্তির ঠিকানা বলা হয়েছে সিলেটের শাহজালাল উপশহরের স্প্রিং গার্ডেন টাওয়ারের জি ব্লকের সপ্তম তলার ৩০৭৭ নং অ্যাপার্টমেন্ট। জাস লিমিটেড নামে একটি অফশোর কোম্পানিতে তার বিনিয়োগ আছে।
‘কর স্বর্গ’ হিসেবে পরিচিত অফশোর কোম্পানিতে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যে গোপন বিনিয়োগ করেছেন আইসিআইজে তার তথ্য প্রকাশ করছে।
গত বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩৫ জন বর্তমান ও সাবেক নেতার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা, সেনা কর্মকর্তাসহ তিন শতাধিক কোটিপতির গোপন বিনিয়োগ বা অর্থ পাচারের তথ্য ফাঁস করে বিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল।
তবে আইসিআইজের প্রথম প্রতিবেদনে বাংলাদেশিদের নাম না এলেও গত ডিসেম্বরে প্রকাশ করা নথিতে ছয় বাংলাদেশি ও বাংলাদেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই বিদেশির নাম আসে।
এদের অন্যতম হলেন- মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার নিহাদ কবির, শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমবি ফার্মার পরিচালক শাকিনা মিরালি, তালিকাভুক্ত কোম্পানি অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান মানজারুল ইসলাম।
বাকি দুইজনের একজন হলেন মুন্সীগঞ্জের বিএনপি নেতা ও মাসাফি গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল হুদা চৌধুরী শাতিলের ভাই ও প্রাইম নিউজ বিডি ডটকম নামক একটি অনলাইন পোর্টালের প্রধান সম্পাদক সায়েদুল হুদা চৌধুরী। অপরজন হলেন অ্যানটেরিস হোল্ডিংস নামক প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারীদের একজন অনিতা রানি ভৌমিক।
এদের নামসহ চূড়ান্ত তালিকায় এস হেদায়েত উল্লাহ, এস রুমি সফিউল্লাহ, সাইফুল্লাহ এস রুমি, উল্লাহ এস হেদায়েত, শাহিদা বেগম শান্তি নামে মোট পাঁচটি নাম যুক্ত হয়েছে। তবে এস রুমি সফিউল্লাহ ও সাইফুল্লাহ এস রুমিও মূলত এক ব্যক্তি। একইভাবে এস হেদায়েত উল্লাহ ও উল্লাহ এস হেদায়েতও মূলত এক ব্যক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াসিংটনভিত্তিক এ সাংবাদিক জোট এ তথ্য ‘প্যান্ডোরা পেপারস’ নামে প্রকাশ করছে। বিভিন্ন গোপন সূত্রে পাওয়া এক কোটি ১৯ লাখ নথি পর্যালোচনা করে প্যান্ডোরা পেপারস তৈরি করেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক জোট। শতাধিক দেশের প্রায় ৩০০ অনুসন্ধানী সাংবাদিক এই জোটের হয়ে কাজ করছেন।