আব্দুল গাফ্ফার, শেরপুর (বগুড়া) থেকে:
বগুড়ার শেরপুরে শ্যামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কাগজ-কলমে ছাত্র সংখ্যা ৫৫ জন ও শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন ৫ জন। কিন্তু সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে মাত্র তিন জন শিক্ষার্থী ও তিন জন শিক্ষক কে উপস্থিত পাওয়া গেছে।
সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত স্কুল পরিচালনার সময় নির্ধারিত থাকলেও এই স্কুলে ছাত্র-শিক্ষক কেউই সময় মত স্কুলে আসেন না। ছুটিও হয় ৩টায়। এভাবেই চলছে সদ্য সরকারি শ্যামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। অনিয়ম দুর্নীতির বেড়াজালে স্কুলটির শিক্ষা ব্যাবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। নিয়ম মোতাবেক স্কুল না চলা ও শিক্ষার মান ভালো না হওয়ায় স্কুলে শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা ভর্তি না করে অন্য স্কুলে ভর্তি করার অভিযোগও তুলেছেন। দিন দিন স্কুলটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা শুণ্যের কোঠায় আসতে শুরু করেছে। শ্যামনগর গ্রামেরই ৩ জন শিক্ষক অথচ স্কুলটিতে শিক্ষার্থী হাতে গণা কয়েকজন।
গত ২১ মে শনিবার বিকাল সাড়ে তিন টায় সরেজমিনে গিয়ে স্কুলটি বন্ধ পাওয়া যায়। ২৬ মে বৃহস্পতিবার আবার বেলা ১১ টায় স্কুলে গেলে খেলাধুলার জন্য পতাকা তুলে স্কুলটি বন্ধ রাখা হয়েছে এমনটি জানানা অভিভাবক সদস্য রুনি রানী।
সর্বশেষ গত ৩ মে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্কুলটিতে তৃতীয় শ্রেনীর সোহাগ নামের একজন মাত্র শিক্ষার্থীকে উপস্থিত পাওয়া যায়। এরপর প্রায় ১ঘন্টা পর চতুর্থ শ্রেণীর নূরে ইসলাম নামে ১ জন ও পঞ্চম শ্রেণীর আব্দুল্লাহ নামের ১ জন শিক্ষার্থীর দেখা মিলে। এসময় ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে তিন জন শিক্ষক কে উপস্থিত পাওয়া যায়। তারা হলেন সহকারী শিক্ষকা কিসমত আরা কেয়া, সান্তনা খাতুনও শোচীন্দ্রনাথ সরকার। দুপুর ২ টা পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকা মেরিনা খাতুন ও সহকারী শিক্ষকা চম্পা খাতুন স্কুলে হাজির হন নি। উপস্থিত শিক্ষকগণকে বার বার অনুরোধ করলেও তারা শিক্ষার্থীর ক্লাস নেন নি ।
অভিভাবক সদস্যর স্বামী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল সংলগ্ন প্রতিবেশী ও স্কুলে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুলে শিক্ষার্থী প্রায় ২০ জন আছে। কিন্তু খাতা কলমে ৫৫ জন রয়েছে। স্কুল চলাকালীন সময়ে গিয়ে ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে উপস্থিত পাওয়া গেছে ৩ জন এবং শিক্ষার্থী উপস্থিত পাওয়া যায় ৩ জন। প্রতিদিন ৩ টায় স্কুল ছুটি হয় এমনটায় জানালেন স্কুলে উপস্থিত ৩ জন শিক্ষার্থী সোহাগ। তারা জানেনা ৪টা পর্যন্ত স্কুলে কাস চলবে। প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের আগে বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে বাড়ি চলে যান শিক্ষকরা। সরকারি ছুটি ছাড়াও স্কুলটি বন্ধ রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়। শিক্ষার্থী অনেক অভিভাবকের অভিযোগ শিক্ষার মান নিন্ম ও শিক্ষকদের অসাদাচরনের কারণে ছেলে মেয়েদের এই স্কুলে না দিয়ে ১কিঃমিঃ দূরে বিশালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। তারা বলেন, একজন সরকারি শিক্ষক অনেক টাকা বেতন পেলেও শিক্ষার মান নেই।
স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা শান্তনা ও কিসমতারা খাতুন জানান, প্রধান শিক্ষিকা অফিসের কাজে বাহিরে আছেন। এই বিদ্যালয়ে মোট ৫ জন শিক্ষক ও ৫৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা কারণ জানেন না। প্রধান শিক্ষিকা মেরিনা খাতুন জানান, আমার স্কুলটি নিয়ম অনুযায়ি চলছে। ১জন শিক্ষিকা অনুপস্থিত বিষয়টি জানতে চাইলে সে জানায় অসুস্থ থাকায় তিনি আসেনি। কিন্তু ছুটি নেয়নি। কিন্তু ১জন শিক্ষার্থী কথা বলায় রেগে গিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে।
এলাকার একাধিক অভিভাবক জানান, শিক্ষকরা নিয়ম নীতি না মেনে খেয়াল খুশি মত তারা স্কুল চালায়। যার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। আর এজন্য তাদের ছেলে মেয়েদের কাছের শ্যামনগর স্কুলে ভর্তি না করে অন্য স্কুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রাসেল আহম্মেদ বলেন, আমি ৪ মাস হয়েছে দায়িত্ব পেয়েছি। অনেক বিষয় আমার জানা নেই।
শেরপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মিনা পারভিন জানান, নির্ধারিত সময়ের আগে স্কুল ছুটি দেওয়া বিষয়টি প্রধান শিক্ষকের কাছে জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।