অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানুষের কাছ থেকে যে অভূতপূর্ব সাড়া আমি পেয়েছিলাম, সেটাই কিন্তু আমার সাহস আর শক্তি। মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাদেরই সাহসে এই পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’
নিজস্ব অর্থয়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়ার পর শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তা বাস্তবায়নের কঠিন যাত্রায় সাথে থাকায় দেশের মানুষের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার সকালে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০১১ সালে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সাথে ঋণচুক্তি সই করা হয়। এরপর শুরু হয় ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের পেছনে কে বা কারা ছিল, তা বহুবার বলেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ষড়যন্ত্রকারীরা ছাড়াও বিশ্বব্যাংকের অভ্যন্তরে একটি গ্রুপ ছিল, যারা অন্যায্যভাবে কিছু কিছু বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল। বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য করার লক্ষ্যে পরোক্ষ চাপ দিতে থাকে। রাজি হইনি। এরপর থেকেই তারা পদ্মা সেতুর কার্যক্রমে বাধা দিতে থাকে। দুদক তদন্ত করে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পায়নি। পরে কানাডার আদালতেও প্রমাণ হয়, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
তিনি জানান, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে জাপান সফরে পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতুর প্রস্তাব দিলে জাপান রাজি হয়। ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর সমীক্ষার তথ্য আসে। ওই বছরের ৪ জুলাই ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০১ এ বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে অগ্রাধিকার তালিকায় যুক্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার।
তিনি আরো জানান, ২০১০ সালের মধ্যে নকশা চূড়ান্ত হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে সংশোধিত ডিপিপি দাঁড়ায় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সেতুর দৈর্ঘ্য পাঁচ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার করার কারণে ব্যয় বাড়ে। এরপর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের সুযোগ রাখা হয়েছে। যুক্ত করা হয় রেল সংযোগ। কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামো যুক্ত হয়। পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও গভীরতা বাড়ে। বাড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যয়। ২০১৭ সাল থেকে সরকার জমি অধিগ্রহণে জমির দামের তিনগুণ অর্থ দেয়া শুরু করে। ২০১৬ সালে সেতুর খরচ আবার বাড়ে। ওই সময় ডলারের বিপরীতে টাকার মান নয় টাকা কমে যায়।
আগামী শনিবার (২৫ জুন) পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায় নির্মিত এ সেতুতে এখন যান চলাচল শুরুর অপেক্ষায় পুরো দেশ।