বাগাতিপাড়া (নাটোর) সংবাদদাতাঃ
জমেলা খাতুন ও পলাশী রানী ভূমিহীন হিসেবে সরকারের কাছ থেকে পত্তন নেওয়া ৯০ শতাংশ জমি বাড়িঘর নির্মাণ করতে ৫০ জন গৃহহীন ও ভ‚মিহীন পরিবারকে হস্তান্তর করলেন। বুধবার এ–সংক্রান্ত কাগজপত্র বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছেন তাঁরা।
ইউএনও কার্যালয় সূত্র জানায়, দারিদ্র জীবনে স্থানীয়দের মাধ্যমে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১/৯২ সালে ডিসি পিএস কেস মূলে সরকারের কাছ থেকে ভূমিহীন হিসেবে এক একর ৬৩ শতক খাসজমি বন্দোবস্ত পান। তবে সেই জমি শুধু কাগজে–কলমেই রয়ে গেছে। গত ৩১ বছরেও চাষাবাদ এবং বাড়ি-ঘর তো দুরের কথা প্রভাবশালীদের কাছ থেকে নিজেদের দখলে নিতে পারেনি। এই জমি কাজে লাগিয়ে তারা দুটি পরিবার ভাগ্যও বদলাতে পারেননি। তাই শেষ বয়সে এসে তাঁরা দুটি পরিবার ওই জমির মধ্যে ৯০ শতক জমি ভূমিহীনদের বাড়ি করতে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জমেলা খাতুন স্বামী জমির আলী (স্বামী ও স্ত্রী যৌথ) ১৯৯১/৯২ সালে ডিসি পিএস কেস মূলে সরকারের কাছ থেকে ভ‚মিহীন হিসেবে এক একর খাসজমি বন্দোবস্ত পান। একই নিয়মে পলাশী রানী এবং স্বামী পরিতশ কুমার দাস ৬৩ শাতাংশ জমি বন্দোবস্ত পান। কিন্তু প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় ্ওই জমি শুধু কাগজে কলমেই থেকে যায় উদ্ধার করতে পারেননি। এরই এক পর্য়ায়ে জমেলা খাতুনের স্বামী জমির আলী এবং পলাশী রানীর স্বামী পরিতশ মারা গেলে দুটি পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। প্রভাবশালীদের দখলে থাকা দুটি পরিবারে বন্দোবস্তকৃত এক একর ৬৩ শাতাংশ জমি উদ্ধার অনিশ্চিত হয়ে যায়। সরকারের উন্নয়ন মূলক কাজে স্ব-প্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ/ আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবয়নের জন্য জমেলার ৬০ শতাংশ এবং পলাশীী রানীর ৩০ শতাংশ জমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিশাত আনজুম অনন্যা, মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাদিউল ইসলাম, জামনগর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম রাব্বানী, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বদরুজ্জামানসহ গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতে জেলা প্রশাসক বরাবর ্ওই সম্পত্তি এককালীন হস্তান্তর করেন। বাকী ৭৩ শতাংশ জমি জমেলা খাতুন ৪০ শতাংশ এবং পলাশী রানীর নামে ৩৩ শতাংশ রেখে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘর নির্মাণ করে দিবে উপজেলা প্রশাসন।
জমেলা খাতুন উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের মরহুম জমির আলীর স্ত্রী এবং পলাশী রানী একই গ্রামের মৃত পরিতশ কুমার দাসের স্ত্রী। তিনি জানান, সরকার জমি দিলেও জোরদারদের কবল থেকে ওই জমি আমি উদ্ধার করতে পারিনি। বারবার চাষাবাদ করতে গেলে তাদের (জোরদারদের) নির্যাতনের স্বীকার হয়েছি। বাড়ি করার সামর্থ্যও আমার নাই। তাই যাদের ঘরবাড়ি নাই, তাদের ঘরবাড়ি করতে ৬০ শতক জমি দিয়া দিছি। আমি খুশিমনেই দিছি। পলাশী রানী জানান, পত্তন লেওয়ার পর থাইকি প্রভাবশালীদের কাছ থাইকি জমি দখল নিতে পারিনি। সরকার খালি জমিই দিছিলি। আমরা জমিতে গেলে মাইরি ফেলানীর হুমকি দিচ্ছিলি।
বাগাতিপাড়ার ইউএনও প্রিয়াঙ্কা দেবী পাল বলেন, জমেলা খাতুন ও পলাশী রানী দরিদ্র হতে পারেন, কিন্তু সম্পদের লোভ নেই তাঁদের। তাঁরা নিজের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে ৫০ জন গৃহহীন পরিবারকে বাড়ি নির্মাণের জন্য তাঁদের জমি দিয়ে দিয়েছেন। এটা কয়জন পারে? আমি তাঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।