সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ ১২:৪৮ অপরাহ্ণ
সর্বশেষ সংবাদঃ

পিতা অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় শিশুকন্যাকে গুলি করে হত্যা

অনলাইন ডেস্ক:

একদল সন্ত্রাসী স্থানীয় এক দোকানির সঙ্গে বাজে আচরণ করেছিলেন। তা দেখে প্রতিবাদ করতে এগিয়ে যান মাওলানা আবু জাহের, তখন কোলে তার শিশুকন্যা। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে।

প্রথম গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, এরপর সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। পরে আবু জাহের ও তার শিশুকন্যা জান্নাত লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জান্নাত।

বুধবার বিকেলের সেই ঘটনার কথা সাংবাদিকদের জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাওলানা আবু জাহের। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তার কোনো পূর্ব শত্রুতা না থাকলেও কেবল অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় হারাতে হল মেয়েকে।

বুধবার বিকেল ৪টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৪ নম্বর হাজীপুর ইউনিয়নের  ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মালেকার বাপের দোকান এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবাসী মাওলানা আবু জাহের (৪০) ও তার কোলে থাকা শিশু তাসফিয়া আক্তার প্রকাশ জান্নাতকে গুলি ছুঁড়ে সন্ত্রাসীরা।

তিন বছর বয়সী জান্নাতের মৃত্যুর ঘটনায় তার খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয় ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও রিমন বাহিনীর প্রধান রিমনকে প্রধান আসামী করা হয়েছে।

পুলিশ বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কোম্পানীগঞ্জ ও বেগমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি জাহেদুল হক রনি সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

আবু জাহের যে বাড়িতে থাকেন, সেখানকার এক ব্যক্তির সঙ্গে জমির মাটি কাটা নিয়ে আরেক ব্যক্তির বিরোধ চলছিলো। সে বিরোধের জের ধরে আগেও হামলা করেছিলো একই সন্ত্রাসীরা। পরে এ নিয়ে সালিশও হয়। সে সালিশে শিশুটির বাবাও উপস্থিত ছিলেন।

বুধবারের হামলার সময় সন্ত্রাসীরা সেই পুরনো ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেন বলে আবু জাহের সমকালকে জানান।

তিনি বলেন, ‘মামুনের দোকানে গিয়ে তাসফিয়ার জন্য একটি চিপস ও জুস কিনে দোকান থেকে বের হওয়ার সময় সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে ৭-৮ জন সন্ত্রাসীর সামনে পড়ি। এসময় তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, তুই ওইদিন বৈঠকে ছিলি। তোর কারণে এত সব ঘটনা। এ কথা বলেই আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। প্রথম গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যায়। এরপর মামুন আমাকে আর মেয়েকে বাড়িতে এগিয়ে দিতে আসে। তখন সন্ত্রাসীরা আবার গুলি ছুঁড়লে আমি ও তাসফিয়া (জান্নাত) লুটিয়ে পড়ি। আমার মেয়ের চোখ,মুখ থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছিল।’

চার বছরের শিশু খুনের ঘটনার লোমহর্ষক বিবরণ দিচ্ছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, এলাকার চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা শিশুটির বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে শিশুটির দিকে ইট ছুঁড়ে মারে এবং শিশুটির বাবা প্রতিবাদ করলে শিশুটিকে টার্গেট করে গুলি করে। সে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পর উপস্থিত কয়েকজনের সাথে হামলাকারীদের বাদানুবাদ হয় এবং এর মধ্যে শিশু ও তার বাবাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলেও তা সফল হয়নি। পেছন থেকে আবার এসে সন্ত্রাসীরা শিশুটির বুক ও মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে। একই সাথে তারা শিশুর বাবাকেও গুলি করে। গুলিতে শিশুটির মাথা ঝাঁঝরা হয়ে যায়।

ওই ঘটনায় আবু তাহের তার ডান চোখ হারিয়েছেন। মা জেসমিন আক্তার মেয়ের মৃত্যুর পর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। নাওয়াখাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন তিনি।

বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি জাহিদুল হক রনি বলেন, প্রধান আসামিসহ গুরুত্বপূর্ণ আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করেছে।

Check Also

শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

অনলাইন ডেস্ক: দেশের কল্যাণ, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি কামনা করে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *