সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ ১:১৯ পূর্বাহ্ণ
সর্বশেষ সংবাদঃ

নদীতে ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষে স্বপ্নভঙ্গ বগুড়ার নারী উদ্যোক্তার


বগুড়ায় প্রথমবার নদীতে ভাসমান খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের উদ্যোগ নিয়ে লোকসানে পড়েছেন এক নারী সহ চার উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তারা লোকসানের একাধিক কারন জানালেও মৎস্য কর্মকর্তার মতে- অনভিজ্ঞতার কারনেই এমনটি হয়েছে।
জানাগেছে, পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জ জেলায় নদীতে ভাসমান খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দির বাঙ্গালী নদীতে ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষের উদ্যোগ নেন সুলতানা রাজিয়া ইতিসহ আরও ৪জন উদ্যোক্তা। তারা উপজেলার পাইকপাড়া নামক স্থানে বাঙ্গালী নদীতে ভাসমান খাঁচা তৈরি করে মাছ চাষ শুরু করেন ২০২১ সালের মে মাসে।

প্লাস্টিকের নেট, বাঁশ, ড্রাম দিয়ে নদীর বুকে মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলেন। এরপর সেখানে তেলাপিয়া ও ভিয়েতনামী কই মাছের চাষ শুরু করেন। কিন্তু কিছু দিন পর থেকেই মাছ মরতে থাকে। উপজেলা মৎস্য কর্তাকে জানালে পরিদর্শন করে মাছ চাষের টেকনিক্যাল ত্রুটি দেখতে পান। পরবর্তীতে জাল ছিঁড়ে অনেক মাছ বেরিয়ে যায়। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়েন উদ্যাক্তারা। সেই সাথে বাঙ্গালী নদীর ড্রেজিং কাজ শুরু হওয়ায় তাদের এই প্রকল্প আরও হুমকির মুখে পড়ে। অবশেষে পুরো প্রকল্প ভেস্তে যায়। বর্তমানে নদীতে ড্রামগুলো ভাসমান থাকলেও সেখানে কোন মাছ নেই বলে জানালেন উদ্যোক্তারা।


এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা সুলতানা রাজিয়া ইতি জানান, “সিরাজগঞ্জে নদীতে ভাসমান খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখে ৪জনে মিলে দেড় বছর আগে বাঙ্গালী নদীতে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। খাঁচা তৈরি, মাছ কেনাসহ প্রায় ৬ লাখ টাকা ইনভেস্ট করি শুরুতেই। পরবর্তীতে আরও এক লাখ টাকা খরচ হয়। লাভজনক ব্যবসা ভেবেই উদ্যোগ নিলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে নিজেদের ভুল বুঝতে পারি। শুরুতেই অনেক মাছ মরে যায়। জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যায় বহু মাছ। সেই সাথে চুরিও হয়েছে অনেক মাছ।” তিনি আরও বলেন, “উদ্যোক্তারা সকলেই মধ্যবিত্ত। বহু কষ্টে ইনভেস্ট করেছিলাম। কিন্তু এখন সর্বশান্ত। একটি টাকাও ফেরত আসেনি। পুরো প্রকল্প ভেস্তে গেছে।” এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য অফিস কোন সহযোগিতা করেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ জানান, “উদ্যোক্তারা প্রকল্প শুরুর আগে তাদের কোন পরামর্শ নেয়নি। মাছ মারা যাবার পর যোগাযোগ করলে আমরা সেখানে পরিদর্শন করি। নদীতে ভাসমান খাঁচা পদ্ধতিতে মাছ চাষের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করার কারনেই এমনটি হয়েছে। মৎস্য অফিসের পরামর্শ নিলে এভাবে লোকসানের মুখে পড়তে হতোনা। এই পদ্ধতি সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেককেই। সারিয়কান্দিতেও আরও অনেকেই নদীতে খাঁচা পদ্ধতি মাছ চাষের বিষয়ে উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করছে।”

মাছ চাষের এই পদ্ধতিটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাফল্য পেয়েছে। বগুড়ায় প্রথমবার নদীতে মাছ চাষের এই অভিনব পদ্ধতি চালু হলে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। অনেকেই এক নজর দেখতে বাঙ্গালী নদীতেদ ছুটে যায়। একই পদ্ধতিতে মাছ চাষের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন অনেকেই। কিন্তু এই উদ্যোগ চরম ভাবে ব্যর্থ হওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন অনেকেই। লোকসানের আশঙ্কায় নতুন করে মাছ চাষে সাহস পাচ্ছেন না কেউ। যদিও মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন- সঠিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে বগুড়াতেও নদীতে ভাসমান পদ্ধতিতে মাছ চাষে সাফল্য পাওয়া সম্ভব।

Check Also

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা!

অনলাইন ডেস্ক: নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন জেসিন্ডা আরডার্ন। ঘোষণাটি নিয়ে যে বিস্তর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *